মৌলভীবাজার প্রতিনিধি;: শিশুটির মায়ের কাছে এক হাজার টাকা পাওনা ছিলো সাব্বির বক্সের। সে টাকা আদায় করতে না পেরে ক্রোধে সেই মায়ের আট বছর বয়সী ছেলেকেই মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয় সাব্বির বক্স (১৯)। খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। আব্দুল হাসিম মাহিম (৮) আগের দিন থেকে নিখোঁজ ছিল। মাহিম রাজনগর উপজেলার খারপাড়া গ্রামের বদরুল ইসলামের ছেলে। সে তার মায়ের সাথে চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পূর্ব সম্পাশি গ্রামে নানার বাড়িতে বসবাস করত।
গত রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মনু নদীর পূর্ব সম্পাশি এলাকায় ভাসমান অবস্থায় একটি তার লাশ দেখতে পান এলাকাবাসী। নিহত মাহিমের বাবা বদরুল ইসলাম ও মা কুলছুম বেগম (৩০) রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার সদর থানায় যান। তাঁরা পুলিশকে জানান যে, তাদের আট বছরের শিশুপুত্র আব্দুল হাসিম মাহিম (৮) শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার থেকে নিখোঁজ।সে বাড়ির পাশের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়।
পুলিশকে বিষয়টি অবগত করাকালীন তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বদরুল ইসলাম জানতে পারেন আখাইলকুড়া ইউনিয়নের সম্পাসী গ্রামের অভিলাশ দের বাড়ীর সামনে মনু নদীর পূর্ব পাড়ের কিনারায় বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে যায়। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াছিনুল হক, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা, বিট অফিসার এসআই মো.আবু নাইয়ুম মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।এদিকে সেখানে মাহিমের বস্তাবন্দি মৃতদেহ দেখতে পান এবং উদ্ধার করা হয়। পরে সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একই সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একদল চৌকশ পুলিশ টিম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সাব্বির বক্সসহ (১৯) তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আটক সাব্বির নিজেই আব্দুল হাসিম মাহিমকে (৮) হত্যার কথা স্বীকার করে।
আটককৃত সাব্বির জানায়, মাহিমের মায়ের কাছে এক হাজার টাকা পাওনা ছিল। সেটা সে আদায় করতে পারছিল না। এটাকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে। হাত-পা বেঁধে মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে গুম করার উদ্দেশ্যে মনু নদীতে ফেলে দেয়।
এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান জানান, এ ঘটনায় নিহত আব্দুল হাসিম মাহিমের বাবা বদরুল ইসলাম বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। অভিযুক্ত সাব্বির বক্স (১৯) নিজেকে অত্র মামলার ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করে নিজেকে অভিযুক্ত করে আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তিনি আর বলেন, অভিযুক্তের দেওয়া তথ্য মোতাবেক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রশির বাকী অংশ তার বসত ঘরের উত্তর পাশের কক্ষে রক্ষিত সিলভারের পাতিলের মধ্য থেকে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া হত্যাকান্ড সংঘটিত স্থান থেকে নিহত মাহিমের পরিহিত একজোড়া প্লাস্টিকের সেন্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে।
এবিএ/১৪ ডিসেম্বর